Thursday, June 25, 2015

বাঙালি মেয়ে সারাহ এখন অামাজনের রানি! (ভিডিওসহ)


ব্রিটিশ বংশদ্ভূত বাঙালি মেয়ে সারাহ বেগমকে বাংলাদেশ চেনে তুখোড় অ্যাডভেঞ্চারার হিসেবেই। তার অারেকটি পরিচয় তিনি একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা। সেই সারাহই জঙ্গলের প্রেমে পড়ে হয়ে গেলেন অামাজনের রানী। না এটি কোনও রূপকথা নয়, বাস্তব ঘটনা।
লাতিন অামেরিকার অামাজন জঙ্গলে ভয়ানক হিংস্র আদিবাসী নিয়ে ডকুমেন্টরি করতে গিয়ে প্রেমে পড়ে গেলেন তাদের রাজা জিঙ্কতোর। তাই তাকে বিয়ে করেই থেকে যেতে চেয়েছিলেন ইকুয়েডরের গভীর জঙ্গলে। যদিও শহুরে সভ্যতায় বড় হওয়া সারাহকে একসময় বাধ্য হয়েই ফিরে অাসতে হয়েছে লন্ডনে।
মাত্র ১৪ বছর বয়সে দুই সপ্তাহের জন্য দাদার বাড়ি বাংলাদেশে এসেছিলেন সারাহ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের প্রেমে পড়েও সেবার থেকে গেছেন ১৬ মাস। কিন্তু এবার তিনি হয়তো স্থায়ীভাবে অামাজনের প্রেমে পড়েই বিয়ে করে ফেলেছেন সেখানকার মানুষকে।
২৬ বছর বয়সী সারাহ ইকুয়েডরের অামাজন জঙ্গলে ঢুকেছিলেন ডকুমেন্টরি তৈরির জন্য। ইচ্ছে ছিলো সেখানকার হুয়ারোয়ানি অাদিবাসীদের জীবনযাত্রা ক্যামেরার মাধ্যমে বিশ্বের সামনে তুলে অানবেন। কিন্তু গভীর অরণ্যে বসবাসকারী মানুষগুলোর মধ্যে গিয়ে সারাহ এতোটাই মুগ্ধ হন যে বিয়ে করে বসেন তাদের রাজা ৫০ বছর বয়সী শিকারি জিঙ্কতোকে। হুয়ারোয়ানি অাদিবাসীরা সারাহকে জানিয়েছে, তিনি বর্হিবিশ্বের প্রথম কোনও মানুষ যে তাদের সঙ্গে থাকার অধিকার লাভ করলো।

অামাজন ও হুয়ারোয়ানি অাদিবাসীদের প্রসঙ্গে সারাহ বলেন, ‘৯ বছর বয়সে অামি প্রথম অামাজনের অাদিবাসীর কথা শুনি। সেইসঙ্গে জানতে পারি অাধুনিক বিশ্বের সভ্যতার চাপে কীভাবে তাদের জীবন এখন ঝুঁকির মুখে রয়েছে। এরপর থেকে তারা অামাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতে থাকে। তাদেরকে দেখার স্বপ্ন তখন থেকেই অামার মধ্যে প্রবলভাবে দেখা দেয়। একসময় ফিল্ম স্কুল থেকে পাস করে অামি তাদের কাছে যাওয়ার প্রস্তুতি নেই। ওই সময় অামি চাকরি ছেড়ে দেই। অার জমানো টাকা ও নিউইয়র্ক থেকে অামার বন্ধু সিনেমাটোগ্রাফার ফ্রাঙ্ক অ্যাঞ্জেলসাইক কে নিয়ে ইকুয়েডর রওনা হই। সেখানে অামার সঙ্গে দেখা হয় ব্রিটিশ সাউন্ডম্যান স্টিফেন বুলের সঙ্গে। তারপর তাদের নিয়ে অামি রওনা হয়ে যাই ইকুয়েডর।’
একসময় লন্ডন থেকে ৫ হাজার ৮০০ মাইল পাড়ি দিয়ে সারাহ তার বন্ধুদের নিয়ে পৌঁছে যান ইকুয়েডরের অামাজন শহর বলে পরিচিত কোকাতে। সেখানে থেকে হিংস্র পিরানহা অার কুমিরের ভয় পেরিয়ে সাঁতার না জানা সারাহ অামাজন নদী হয়ে পৌঁছে যান জঙ্গলে হুয়ারোয়ানিদের গ্রাম বামিনোর কাছাকাছি।
সেখানে অবশ্য সারাহ অার তার বন্ধুদের ভালোভাবেই গ্রহণ করেছিল হুয়ারোয়ানিরা। তারা সারাহ অার তার বন্ধুদের দেখিয়েছিল তাদের ঐতিহ্যবাহী নাচ, শিকার পদ্ধতি। খেতে দিয়েছিল নিজেদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। সেই থেকেই সারাহ ওই অাদিবাসীদের সংস্কৃতির প্রেমে পড়তে থাকেন। এক পর্যায়ে বাঙালি মেয়ে সারাহকে বিয়ে করতে হয় হুয়ারোয়ানিদের রাজা জিঙ্কতোকে। শুধু অামাজনীয় ভাষা জানা জিঙ্কতোর সঙ্গে মানিয়ে নিতেও কষ্ট হয়নি সারাহ’র।
সারাহ বলেন, অামি তাদের অনুরোধ করেছিলাম অামাকে তাদের মতো একটা পোশাক বানিয়ে দিতে। তারাও অামাকে গাছের অাঁশ দিয়ে তৈরি কটিদেশে জড়ানোর মতো সুন্দর একটি পোশাক বানিয়ে দিয়েছিল। একসময় তারা অামাকে তাদের রানি হি‌‌‌সেবে ঘোষণা দেয়। সেসময় তাদের মেয়েরা অামাকে ঘিরে অনেক নেচেছিল। তারা অামাকে তাদের ঐতিহ্যবাহী চিচা নামের একটি পানীয় পান করতে দেয়। অার অামার নাম রাখা হয় হুয়ারোয়ানি ভাষায় ইমাকা। ইংরেজিতে যার অর্থ দ্য লাস্ট নেম। মাথায় পরিয়ে দেওয়া হয় ম্যাকাও পাখির পালকের মুকুট। তারপর অামাকে ‌‌বিয়ে করতে হয় সেখানকার সবচেয়ে শক্তিশালী যোদ্ধাকে।’
এই বিয়েটা কেবলই একটা অানুষ্ঠানিকতা মাত্র। যা বহিরাগত হিসেবে জঙ্গলের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার প্রতিক।
স্বামী সম্পর্কে সারাহ বলেন, ‘জিঙ্কতো একজন চমৎকার মানুষ ও শক্তিশালী শিকারী। যা তাকে স্থানীয় নারীদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছে। সে লন্ডনে অামার জীবন নিয়ে খুবই কৌতুহলি। সে অামার বাবা-মা সম্পর্কেও জানতে অাগ্রহী।’

অবশ্য সভ্য দুনিয়ায় বড় হওয়া সারাহ বেশিদিন থাকতে পারেননি জঙ্গল। এক পর্যায়ে পাকস্থলির সংক্রমণে অাক্রান্ত হয়ে পড়ে সে। এছাড়া তার সঙ্গে থাকা ব্রিটিশ সাউন্ডম্যান স্টিফেন বুল হাতে অাঘাত পান। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ে সংক্রমণ। ফলে স্থানীয়দের সহায়তায় বাধ্য হয়ে তাদের ফিরে অাসতে হয় শহরে।
তবে শহরে ফিরে এসে সারাহ তার শ্বশুর বাড়িকে ভুলে যাননি। হুয়ারোয়ানিদের নিয়ে তার তৈরি ‘অামাজন সোল’ ডকুমেন্টরিটি গত বছর প্রদর্শীত হয়েছে কান চলচ্চিত্র উৎসবে।

 ভিডিও দেখতে এখানে ক্লিক করুন >>>

হুয়ারোয়ানি অাদিবাসীদের সঙ্গে লন্ডন থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান সারাহ। তিনি জানান, অাদিবাসীদের কেউ কেউ কাছের কোকা শহরে মাঝেমাঝে অাসেন। সেখান থেকেই অন্যের সাহায্য নিয়ে তারা ই-মেইল ও ফেসবুকের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। মাঝে মাঝে স্কাইপেতেও তাদের কথা হয়।

No comments:

Post a Comment